প্রকাশিত: Sat, Jan 27, 2024 12:38 AM
আপডেট: Sat, Jun 14, 2025 12:18 AM

[১] গাজায় অবিলম্বে গণহত্যা বন্ধে ইসরায়েলকে আইসিজের নির্দেশ [২] ফিলিস্তিন স্বাগত জানালেও যুদ্ধ চালানোর ঘোষণা নেতানিয়াহুর

রাশিদুল ইসলাম: [৩] ফিলিস্তিনের গাজায় অবিলম্বে গণহত্যা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে ইসরায়েলকে নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)। তবে চলমান অভিযান থামানোর আবেদনের ব্যাপারে আদালত কিছু বলেননি। শুক্রবার নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে অবস্থিত জাতিসংঘের এ সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক জোয়ান ডনোগু বলেন, আদালত বিবেচনা করে যে; গাজা উপত্যকায় বিপর্যয়কর মানবিক পরিস্থিতি আদালত তার চূড়ান্ত রায় দেওয়ার আগে আরও অবনতির ঝুঁকিতে রয়েছে। গাজার বেসামরিক নাগরিকরা ‘অত্যন্ত অরক্ষিত।’ বিচারকের রায় পড়ার আদালত কক্ষে বাদি দক্ষিণ আফ্রিকা ও বিবাদি ইসরায়েলের প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিলেন। বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা, রয়টার্স

[৪] একই সঙ্গে ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা বন্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছে সে ব্যাপারে আইসিজেকে এক মাসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে হবে। জানাতে হবে তারা গাজায় গণহত্যা প্রতিরোধে তার ক্ষমতার মধ্যে সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ বহাল রাখার জন্য কী করছে। আদালত বলেছেন যে, ইসরায়েলকে অবশ্যই গাজায় গণহত্যার প্ররোচনা প্রতিরোধ এবং সংশ্লিষ্ট সেনা কর্মকর্তাদের শাস্তি দিতে হবে।

[৫] গাজায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার গণহত্যা মামলার প্রথম রায় দিল আইসিজে। জাতিসংঘের এ সর্বোচ্চ আদালত সিদ্ধান্ত দিয়েছে,গাজায় ইসরায়েলের ‘গণহত্যা’ চালানোর যে অভিযোগ দক্ষিণ আফ্রিকা এনেছে, তা আমলে নেওয়ার বিচারিক এখতিয়ারও ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের রয়েছে। এ অভিযানে ইসরায়েল রাষ্ট্রীয়ভাবে গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার মামলায়। গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে আসা ইসরায়েল এ মামলা খারিজ করে দেওয়ার আবেদন জানালেও তাতে সায় দেয়নি আইসিজে।

[৬] আদালত আরো বলেন যে, ইসরায়েলকে গাজায় মানবিক সাহায্যের অনুমতি দিতে হবে।

[৭] মামলার বাদি দক্ষিণ আফ্রিকা আদালতের এ দ্রুত রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। দেশটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রী ড. নালিদি পান্ডোর এ রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক আইনের শাসনে এ রায় একটি নিরঙ্কুশ বিজয়। 

[৮] তবে আদালতের এ রায়ের পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমরা আত্মরক্ষার লড়াই চলবে। আমাদের নিরঙ্কুশ বিজয় না পাওয়া এবং জিম্মিদের উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত এ যুদ্ধ চালিয়ে যাব। 

[৯] সিনিয়র হামাস কর্মকর্তা আবু জহুরি আদালতের এ রায়কে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বলেছেন, এ রায় ইসরায়েলকে আরো বিচ্ছিন্ন করবে। এবং এ রায়ের মাধ্যমে ইসরায়েলের অপরাধ প্রকাশ্যে এল। তিনি আদালতের সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টির আহবান জানান। এর আগে হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়, যদি আইসিজে যুদ্ধবিরতির নির্দেশ দেয় এবং ইসরায়েল তা মেনে নেয় তাহলে হামাসও এটি মেনে চলবে। ইসরায়েলের কারাগারে আটক সকল ফিলিস্তিনিকে ?মুক্তি দিলে বন্দী ইসরায়েলিদেরও ছেড়ে দেওয়া হবে। 

[১০] ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল মালিকি বলেন, আদালত মানবতার পক্ষে রায় দিয়েছে। 

[১১] আইসিজের যে ১৭ জন বিচারকের প্যানেল শুক্রবার এ সিদ্ধান্ত দিয়েছে, তাদের মধ্যে ১৫ জন স্থায়ী বিচারক। এর বাইরে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইসরায়েলের একজন করে বিচারক রয়েছেন। এ আদালতের প্রধান বিচারক বলেছেন, জেনোসাইড কনভেনশন অনুযায়ী, যে কোনো রাষ্ট্র অপর রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে আইসিজেতে আসতে পারে। গাজা পরিস্থিতি নিয়ে এ আদালতে মামলা করার আইনি এখতিয়ার দক্ষিণ আফ্রিকার রয়েছে। 

[১২] আইসিজে রায় মানতে ইসরায়েলকে বাধ্য করতে না পারলেও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি গুরুত্ব বহন করে। এ মাসের শুরুর দিকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ নিয়ে আইসিজেতে আসে দক্ষিণ আফ্রিকা। জরুরি ভিত্তিতে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান বন্ধের আদেশ চাওয়া হয় সেখানে, যে অভিযানে ২৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণ গেছে।

[১৩] গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজা নিয়ন্ত্রকারী ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলে আকস্মিকভাবে ঢুকে হামলা চালিয়ে ১২০০ মানুষকে হত্যা এবং অন্তত ২৫০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায়। ওইদিন থেকেই গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল, যা এখনো চলছে। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব